Magic Lanthon

               

ফাওজুন নাহার মনিকা

প্রকাশিত ৩০ জুলাই ২০২৩ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

ফিল্ম রিভিউ

সিরিজ ‘আমি কী তুমি’

ফাওজুন নাহার মনিকা

কথা শুরু 

ফ্যান্টাসি, বিজ্ঞান নিয়ে কল্পকাহিনী, রহস্য- রোমান্স, সাই-ফাই এগুলো নিয়ে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর সিনেমা অথবা সিরিজ বানানোর ফুসরত খুব কম কারণ এ রাষ্ট্রগুলো দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা পূরণের  জন্য প্রাত্যহিক লড়াই করতে হয়। তাই কল্পকাহিনি নিয়ে প্লট গঠন করা খুব টাফ। আর বাজেটও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ রাষ্ট্রগুলোর প্রধান জনরা আমি মনে করি ক্রাইম থ্রিলার, সামাজিক সাংসারিক টানাপোড়েন। অভাব কাটিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগার সুযোগ কম। 

'ভিকি জাহেদ' নামটা শুনলে তাঁর দুরকমের দর্শক পাওয়া যায়।  এক. তাঁর কাজগুলো ইউনিক।  দুই. উনি টুকলি করেন নাটক, সিরিজ নির্মাণে। প্রথম সারির দর্শককে আমি সম্মান জানাই কেননা বাংলাদেশে উনি নতুন নতুন বিষয়, নির্মাণেও নতুন আঙ্গিক এনেছেন যা অবশ্যই কিছুটা আলাদা। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের পরে উনার আঙ্গিকটা আলাদাই। একটা দর্শন স্ট্যাবলিশ করতে চেয়েছে প্রতিটা কাজেই। স্পেশালি ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট টাইপ।  দুই. উনি টুকলি করেন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নাই। তবুও আলাদা কিছু করছেন এটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভালো লাগে।

কেমন ছিলো 'আমি কী তুমি' ওয়েবসিরিজ?

পর্ব ০১ : ক্রাইম থ্রিলার জনরা

শহরে একের পর এক খুন হচ্ছে, একই প্যার্টানে, পুলিশ খুঁজে মরছে। কিন্তু উদ্ধার করতে পারছে না। এই ধারাতে দেখতে গেলে এটি ক্রাইম থ্রিলারের মধ্যে পড়ে। কিন্তু পুলিশি কার্যক্রম, অভিনয় আমার কাছে দুর্বল লেগেছে।  এই জায়গায় আরো উন্নত করার সুযোগ ছিলো।

পর্ব ০২ : রোমান্স ও মনস্তাত্ত্বিক সেগমেন্ট

এই সিরিজের প্রেম, প্রেমের প্রকাশ, মনস্তাত্ত্বিক উঠানামা, জার্নি অফ এন এক্টর, একজন এক্টরের ফ্যামিলি ক্রাইসিস, একজন সহকারি এসিস্ট্যান্ট ডিরেকটরের জার্নি অল্প পরিসরেও পারফেক্ট তুলে ধরেছেন।

পর্ব ০৩ : রাষ্ট্রের প্রকৃত চিত্র নির্মাণে এই সিরিজ

একটা রাষ্ট্রের সাধারণ সংকট ও রাষ্ট্রের সামাজিক কিছু সমস্যা, স্টুডেন্ট পলিটিক্সের চিত্র এগুলো উঠে এসেছে এই সিরিজে। রাহাত চরিত্রের মধ্যে 'আবরার হত্যাকাণ্ডের' চিত্র খুঁজে পাবেন সহজেই। 'বাংলাদেশ' আর 'সিগমা বাংলাদেশের' তুলনামূলক চিত্র দিয়ে পরিচালক ডিপ ম্যাসেজ দিয়েছে রাষ্ট্রের সামাজিক সমস্যা  নিয়ে কী করা যায়!

পর্ব ০৪ : সাই-ফাই জনরা

এই জনরার মুভিগুলো আরো স্ট্রং এবং কনসেপ্টের দিক থেকে ক্লিয়ার হয়। সেই দিক থেকে খানিক গোঁজামেলে লেগেছে। তবে প্যারালাল ইউনিভার্সের জীবনযাত্রা আমার আকর্ষণীয় লেগেছিলো। সাই ফাই জনরাতে ফেললে এটা দুর্বল চিত্রনাট্য। তবে রূপক ( এলিগোরিক) কল্পকাহিনির জন্য দারুণ।

নির্মাণ শৈলী

প্লট : প্লট গঠনে ভিকি জাহেদ অত্যন্ত সময় নিয়েছেন, চর্চা করেছেন বোঝা যায়। মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা, প্রেমের বহিঃপ্রকাশ, দর্শকদের পরিমিত আনকমন ঘটনার ইনফরমেশন, চমক প্রদানে তিনি তাঁর প্লটকে সুন্দর সাজিয়েছেন। তিনি একজন লেখাপড়াওয়ালা প্লট মেকার।

পয়েন্ট অফ ভিউ : সম্ভবত  ক্রাইম, রোমান্স, রাষ্ট্রীয় সমস্যা এবং পানিশমেন্ট এই চার চিন্তার ভেতর তাঁর পয়েন্ট অফ ভিউ ঘোরাঘুরি করেছে।

অভিনয় : আমার ভালো লেগেছে মেহজাবিনের অভিনয়। শ্যামল মাওলার অভিনয় ভালো লাগেনি। পুলিশের হেডের অভিনয় অত্যন্ত বাজে লেগেছে।

মেকিং : এই সিরিজের মেকিং আমার ভালো লেগেছে। 'চমক' এই পরিচালকের বড়ো মেকিং সাফল্য। স্টোরি টেলিং ভালো ছিলো।

বিদায়-বাণী

৮ পর্বের সিরিজটি দেখতে গিয়ে অনেকের হয়তো ভালো লাগবে না। তবে বাংলাদেশে এমন কনটেন্ট নির্মাণ হচ্ছে এতো স্বল্প বাজেটে এটাও কম নয়। যাত্রা শুরু হয়েছে, যাত্রাটা কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে হলেও সিরিজটি দেখতে পারেন। i screen এ দেখা যাচ্ছে সিরিজটি। সমালোচনা করার জন্যে হলেও দেখুন। আমার ভালো লেগেছে। চমকিত হয়েছি। শেষ অব্দি। হ্যাপি ওয়াচিং।

লেখক : ফাওজুন নাহার মনিকা, লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন