Magic Lanthon

               

মুর্শিদা টুম্পা

প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১২:০০ মিনিট

অন্যকে জানাতে পারেন:

‘যদি ভাবো কিনছো আমায় ভুল ভেবেছো’

নতুনকে খুঁজে, নতুনের টানে অ্যালাঁ রেনেঁ 

মুর্শিদা টুম্পা

 

মানুষের অবচেতন মনে প্রতিনিয়তই চলতে থাকে স্মৃতি আর বিস্মৃতির দ্বন্দ্ব। সে চাইলেই স্মৃতি থেকে মুক্ত হতে পারে না। কখনো বা সুখস্মৃতির আবেশে সে আত্মতৃপ্তিতে সিক্ত হয়। আবার কখনো দুঃসহ স্মৃতি তাকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। তাই অবচেতন মন, চেতন মনের বাস্তবতাকে কখনো অতীতের কল্পলোকে নিয়ে যেতে চায়। আবার কখনো বা যন্ত্রণাদায়ক অতীত থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসতে চায় সুখের অন্বেষণে বাস্তবে। এভাবে মানুষের মন প্রতিনিয়ত অতীত ও বর্তমানের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে থাকে। মানবমনে চলতে থাকা এই অতীত, কল্পনা আর বাস্তবতার খণ্ড খণ্ড আখ্যানকে সুতোয় গেঁথে জীবন্ত করে তোলাই শিল্পের কাজ। তবে চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে অন্য সব শিল্পমাধ্যমের চেয়ে কল্পলোকের এই ক্যানভাসকে নিখুঁতভাবে চিত্রায়ণ করতে পেরেছে। কারণ চলচ্চিত্রের মতো এতটা বিশ্বাসযোগ্য দৃশ্যময়তা আর কোনো মাধ্যমের নেই।

লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের ধারণকৃত স্টেশনে মানুষের ব্যস্ত আসা-যাওয়া, বাগানে পানি দেওয়া কিংবা বাচ্চাকে খাওয়ানোর দৃশ্যগুলো যখন চলচ্চিত্রের ইতিহাস রচনা করলো, মানুষ কি তখন ভাবতে পেরেছিলো চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই টাইম-মেশিনে চেপে শত শত বছর আগের হারিয়ে যাওয়া সময়কেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব কিংবা কয়েক সেকেন্ডে ঘুরে আসা সম্ভব কয়েকশো বছর পরের পৃথিবী থেকেও?

মূলত বাস্তবকে যথাযথভাবে রূপায়ণ করার জন্য, যান্ত্রিক রূপ দেওয়ার জন্য মুভি ক্যামেরা আবিষ্কার হয়েছিলোলুমিয়ের ভাইয়েরা অন্তত তাই ভেবেছিলেন। কিন্তু  ফ্রান্সের জাদুকর, নির্মাতা মেলিয়ে চলচ্চিত্রে বাস্তবকে তুলে ধরার চেষ্টা করেননি, তিনি কল্পনার পুনর্নির্মাণের দিকে হাঁটলেন। মেলিয়ের দেখানো পথে চলচ্চিত্রে যুক্ত হলো কল্পনাশক্তির প্রয়োগ। বিভ্রমের এই জগতটি ভরে উঠলো কল্পনার সজীবতায়। সৃষ্টি হলো চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা।

২০ শতকে এসে চলচ্চিত্রে আসলো বিরাট পরিবর্তন। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। শোষণ আর হিংসার দাম্ভিকতায় মানবিকতার পরাজয় হলো, বাস্তবতা তখন নির্মম হয়ে উঠলো, বারুদের গন্ধে মুখ থুবড়ে পড়লো পৃথিবী। এই রকম সময়ে একজন শিল্পী কি শুধুই ফ্যান্টাসির জগতে ঘুরে বেড়াবেন? তার ক্যানভাস তো চিত্রিত হবেই রূঢ় বাস্তবতার আর্তনাদে। তাই শিল্পকে শুধু বিত্তবানের অতিথিশালায় না রেখে সাধারণের প্রকাশমাধ্যমে পরিণত করতে আবির্ভাব হয় শিল্প আন্দোলনের। প্রচলিত শিল্পকে পাশ কাটিয়ে বা কখনো ভেঙে শিল্পীরা তাদের নিজস্ব চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। এরই আলোকে অভিব্যক্তিবাদ, কিউবিজম, ফিউচারিজম, দাদাইজম, সুররিয়ালিজমের মতো শিল্প আন্দোলন আমরা দেখতে পাই। অল্প সময়ের মধ্যে সেই শিল্প আন্দোলনের ছাপ লক্ষ করা যায় চলচ্চিত্রেও। ফলে এতদিন পর এসে চলচ্চিত্রে মানুষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, এটিই ছিলো চলচ্চিত্রের শিল্প হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।

২৫ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয় বিশ্বযুদ্ধ, আবারো সেই মানবিক বিপর্যয়। মিত্রবাহিনীর প্রতিরোধে ইতালিতে ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির পতন, চোখের সামনেই বীভৎস হাজারো পচা-গলা লাশ, বিধ্বস্ত দেশের দিশেহারা-ক্ষুধার্ত লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের দিগ্বিদিক ছুটোছুটি, সেই সঙ্গে শিল্প-সাহিত্য চর্চার প্রতিষ্ঠানসহ চলচ্চিত্র স্টুডিওগুলো ধ্বংসপ্রায়। এই নিদারুণ বাস্তবতা ইতালির চলচ্চিত্রনির্মাতাদের তাড়িত করেছিলো নতুন কোনো পথের অনুসন্ধানে। ঠিক এই সময় বহমান নব্য-বাস্তববাদ সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকে পড়লেন তারা। নির্যাতনের বিরুদ্ধে অসম-সাহসী বিশ্লেষণমূলক এই ধারার প্রতিবাদ তাদেরকে উৎসাহিত করলো। সময়ের স্রোতে পালতোলা শিল্প নামের সেই নৌকাটিতে তারা চেপে বসলেন। তবে মাধ্যম কিন্তু সাহিত্য নয়, চলচ্চিত্র। ক্যামেরা হাতে তারা রাস্তায় নেমে পড়লেন। জীবন যেখানে যেমন, ঠিক তেমন করেই তুলে ধরে সেলুলয়েডের ফিতায়এই প্রত্যয়ে জন্ম নিলো নব্য-বাস্তববাদ নামে নতুন এক শিল্পদর্শন।

৫০ দশকের মাঝামাঝিতে ফ্রান্সে নব্য-বাস্তববাদ খানিকটা সম্প্রসারিত রূপে নতুন ধারা হিসেবে আবির্ভূত হয়, যা পরিচিতি পায় নুভেলভাগ বা ফরাসি নবতরঙ্গ নামে। এ সময় ফ্রান্সে পর পর কয়েকটি ঘটনা ঘটে। ফ্রান্সের ফিল্ম স্কুল আই ডি এইচ ই সি (Institute for Advanced Cinematographic Studies) থেকে চলচ্চিত্র অধ্যয়ন শেষে বেশকিছু নতুন কলাকুশলী ও শিল্পী বের হন; একই সময়ে অত্যন্ত মৌলিকতার সঙ্গে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে থাকেন কিছু তরুণ শিল্পী। এছাড়া চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা কাইয়্যে দ্যুতেও নানাধরনের চলচ্চিত্র ও পরিচালকদের নিয়ে নিয়মিত তাত্ত্বিক আলোচনা চলছিলো। মূলত এই পত্রিকাটিতে যারা লিখতেন তারা তাত্ত্বিক আলোচনার পাশাপাশি চলচ্চিত্র-নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন, নতুন ধরনের চলচ্চিত্র দিয়ে সূত্রপাত হয় নবতরঙ্গ ধারার।

চলচ্চিত্র-নির্মাণের পথে তারা নতুন একটি প্রবণতার প্রচলন ঘটান, যাকে বলা হয় Camera Stylo (ক্যামেরা-পেন) অর্থাৎ একজন লেখকের কাছে যেমন তার কলম, একজন চলচ্চিত্রকারের কাছে তেমনি তার ক্যামেরা এবং ক্যামেরাকেও কলমের মতোই সহজ-স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে হবে। এই নির্মাতারাই তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে গতানুগতিক ফরাসি চলচ্চিত্রের বাইরে এসে এগিয়ে নিলেন নবতরঙ্গ ধারাকে। এরা মূলত চলচ্চিত্র-নির্মাণের প্রচলিত কাঠামোকে ভাঙতে চেয়েছিলেন। চলচ্চিত্রের আধেয় হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিলেন সমাজ সংলগ্ন বিষয়কে।

শুধু বিষয়েই নয়, চলচ্চিত্রের আঙ্গিকেও যোগ হলো নতুন মাত্রা। এই নির্মাতারা সাধারণত স্টুডিওর বাইরে গিয়ে শুটিং করতেন। সেজন্যই হালকা ওজনের হাতে ধরা ক্যামেরা, কাঁধে ঝোলানো টেপ রেকর্ডার ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। সেই সময়ের চলচ্চিত্রগুলোতে একধরনের বাস্তবমুখী ও জীবনঘনিষ্ঠ রূপ আনার জন্য অপেশাদার অভিনেতাদের নিয়ে কাজ করা হতো। কৃত্রিম আলোর ব্যবহার কম থাকায় নির্মাতারা চিত্রধারণে অতি সংবেদনশীল নেগেটিভ ব্যবহার করতেন। এমনকি তারা প্রচলিত মসৃণ ধারাবাহিকতাসমৃদ্ধ সম্পাদনা পদ্ধতির পরিবর্তে প্রচলন ঘটালেন দ্রুতগতিসম্পন্ন সম্পাদনা পদ্ধতিরও। দৃশ্যমাত্রাগত দিক থেকে নবতরঙ্গের চলচ্চিত্রকাররা বিনির্মাণের পক্ষে ছিলেন। এসব চলচ্চিত্রে গল্পের বর্ণনায় আদি-মধ্য-অন্তের পরম্পরা ছিলো কম।

ফরাসি নবতরঙ্গ ধারার নির্মাতাদের প্রত্যেকের নির্মাণশৈলীতে বিশেষ কিছু অনন্যতা থাকতো। কারো চলচ্চিত্রে রাজনীতি এসেছে; যেমন গদার, ক্রিস মার্কার; অন্যদিকে রোহ্মার, ত্রুফোর চলচ্চিত্রে এসেছে সামাজিক প্রসঙ্গ; আবার লুই মাল, অ্যালাঁ রেনেঁর চলচ্চিত্রে স্থান পেয়েছে চরম আত্মকেন্দ্রিকতা। অবশ্য অ্যালাঁ রেনেঁর চলচ্চিত্রে আত্মকেন্দ্রিকতার বাইরেও জোরালোভাবে উঠে এসেছিলো রাজনীতি। তিনি প্রায় তার প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রেই ভিন্ন ভিন্ন শৈলী নিয়ে হাজির থাকতেন।

রেনেঁ তার চলচ্চিত্রের থিম হিসেবে কালচেতনার বিষয়টি নিয়ে বার বার ফিরে এসেছেন। প্রতিনিয়ত মানবমনে চলতে থাকা স্মৃতিকাতরতা, কল্পনা ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব দারুণভাবে আকৃষ্ট করে তাকে। বাস্তব ও কল্পনার এই দ্বন্দ্বকে তিনি সেলুলয়েডিয় রূপ দেন কখনো বা কবিতার ছন্দে, কখনো প্রেমের অনবদ্যতায়। নির্মাণশৈলীর ভিন্নতায় অনেক সময় খুব সাধারণ বিষয়কেও তিনি ফুটিয়ে তুলতেন অনন্যতায়।

১৯২২ সালে ফ্রান্সের এক অভিজাত পরিবারে অ্যালাঁ রেনেঁর জন্ম। মাত্র ১২ বছর বয়সেই চলচ্চিত্র-নির্মাণের চিন্তা আসে তার মাথায়। এ সময় জন্মদিনের উপহার হিসেবে বাবার কাছ থেকে পাওয়া আট মিলিমিটারের কোডাক ক্যামেরা নিয়ে ক্ষুদে নির্মাতা বনে যান তিনি; তৈরি করেন তিন মিনিটের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ফ্যান্তোমাস। আগেই বলেছি, যে সময়টাতে রেনেঁ জন্মেছিলেন সেই সময়েই ফ্রান্সের শিল্প-সাহিত্যে শিল্প আন্দোলনের ছোঁয়া লেগেছিলো। রেনেঁর মধ্যে তাই ছোটো বেলাতেই প্রভাব পড়েছিলো এই আন্দোলনের। ফ্রান্সে এই ধারার পথিকৃৎ ছিলেন লেখক ও সাহিত্যিক আঁদ্রে ব্রেতো (Andre Berton)। অভিজাত পরিবারে বেড়ে ওঠায় শিল্প-সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন রেনেঁ, সেই সূত্রেই ব্রেতোর সান্নিধ্যে আসা। শিল্প, সাহিত্যে সুররিয়ালিজম ধারা প্রতিষ্ঠায় ব্রেতোর অবদান ছিলো অনস্বীকার্য।

সুররিয়ালিজম মেনিফেস্টো গ্রন্থের রচয়িতা ব্রেতো বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ফরাসি সরকার তার লেখার ওপর একসময় নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে। যাহোক, রেনেঁর বয়স যখন ১৪, তখন সুররিয়ালিজম ধারা ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠা হয়ে গেছে। সুররিয়ালিজম ধারার প্রতি আকৃষ্ট হন রেনেঁ। যদিও এতো অল্পবয়সী কিশোরের সুররিয়ালিজমের পুরো তাৎপর্য বোঝা সম্ভব ছিলো না। বলা যায়, একধরনের আবেগের বশবর্তী হয়েই এর প্রতি তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে রেনেঁর চিন্তার জগতে ব্রেতো ও সুররিয়ালিজম অনুঘটকের কাজ করেছিলো। যা তাকে পরে নবতরঙ্গ ধারার সফল নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পথকে সহজ করেছে।

চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রেনেঁর কিশোর মন এ সময় অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তাই ১৯৩৯ সালে রেনেঁ অভিনেতা হওয়ার বাসনায় চলে আসেন প্যারিসে। থিয়েটার দিয়ে শুরু হয় তার অভিনয় জীবনের। অবশ্য এর পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতেও ভুললেন না তিনি। এরপর চলচ্চিত্র জগতে নিজেকে পাকাপোক্ত করতে ১৯৪৩ সালে আই ডি এইচ ই সি-তে চলচ্চিত্র সম্পাদনা কোর্সে ভর্তি হন রেনেঁ। দুই বছরের মাথায় শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সবকিছু বাদ দিয়ে রেনেঁ যোগ দেন মিলিটারি সার্ভিসে। সেখানে অবশ্য একটি ভ্রাম্যমান থিয়েটার কোম্পানির সদস্য হিসেবে তিনি কাজ করতে থাকেন। ১৯৪৬-এ প্যারিসে ফিরে এসে এবার চলচ্চিত্র সম্পাদনাকেই পেশা হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করেন রেনেঁ, পাশাপাশি নির্মাণ করতে থাকেন স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্যচিত্র।

আগেই বলেছি, চলচ্চিত্রে তার ঝোঁক সেই ১২ বছর বয়সে, পরে যোগ হয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ। শিল্পী ভ্যানগগ-এর চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৪৮ সালে নির্মাণ করেন ভ্যানগগ প্রামাণ্যচিত্রটি। শিল্প তার চলচ্চিত্রের বিষয় হয়ে উঠতে থাকে। একে একে নির্মাণ করেন গগ্যা (১৯৫০), গুয়ের্নিকা (১৯৫০) [এতে সহপরিচালক ছিলেন রবার্ট হ্যাজেন্স]। ফরাসি উপনিবেশবাদের কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া আফ্রিকান শিল্প নিয়ে নির্মাণ করেন স্টাচুস অলসো ডাই (১৯৫৩)।

নাইট অ্যান্ড ফগ প্রামাণ্যচিত্রটি ১৯৫৫ সালে নির্মাণ করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে। প্রথাগত চলচ্চিত্র-নির্মাণের ধারা ভেঙে নির্মিত এই প্রামাণ্যচিত্রটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও প্রশংসিত হয়। ঐতিহাসিক ঘটনাকে তুলে ধরার যে ন্যারেটিভ কাঠামো ছিলো, নাইট অ্যান্ড ফগ-এ রেনেঁ তা ভেঙে ফেলেন। যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী জিন ক্যারল-এর লেখা অবলম্বনে কবিতার ছন্দে উপস্থাপন করলেন নাৎসি ক্যাম্পের ভয়াবহ স্মৃতিকে। 

এরপর ১৯৫৯ সালে রেনেঁ নির্মাণ করলেন তার প্রথম কাহিনিচিত্র হিরোশিমা মন আমুর। এই চলচ্চিত্রটি সমসাময়িক ফরাসি নবতরঙ্গ ধারার অন্যতম উদাহরণ। নাইট অ্যান্ড ফগ-এর ব্যাপক        জনপ্রিয়তার পর আরগস ফিল্ম (Argos film) রেনেঁকে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পুনরাবৃত্তি হবেএই ভেবে রেনেঁ তা নির্মাণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া আরো একটি কারণ ছিলো। নাইট অ্যান্ড ফগ নির্মাণের পর রেনেঁকে সেন্সরশিপের মতো কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। আসলে রাষ্ট্রের গোপনীয়তা ফাঁস হওয়ায় তার ওপর কিছুটা খড়গ নেমে আসে সেসময়। যদিও রেনেঁ হাল ছাড়বার পাত্র নন। তিনি এবার একটু কৌশলী হলেন। সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে একটি প্রেমকাহিনির মোড়কে যুদ্ধকে হাজির করলেন। আর এ কাজে তাকে সাহায্য করলেন ফরাসি ঔপন্যাসিক মার্গারেট দুরাস। তার লেখা প্রেমের গল্পেরে আবরণে রেনেঁ যুক্ত করলেন যুদ্ধকে।

স্মৃতি তথা কালচেতনাকে অনুসন্ধান আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের উদ্ঘাটন ছিলো হিরোশিমা মন আমুর-এর কেন্দ্রে। এর কাহিনি গড়ে ওঠে আধুনিক হিরোশিমার পটভূমিতে। সেখানে সাক্ষাৎ হয় এক ফরাসি নারী ও জাপানি পুরুষের। সেটিই ছিলো তাদের প্রথম সাক্ষাৎ, অতঃপর প্রেম। ফরাসি প্রেমিকা হিরোশিমার বিধ্বস্ততা নিয়ে একটি চলচ্চিত্রের শুটিং-এর কাজে এসেছিলেন। একদিনের মধ্যে তাকে ফিরে যেতে হবে ফ্রান্সে। এই অল্প সময়ের মধ্যে অন্তরঙ্গতায় মিলিত হন তারা। জাপানি প্রেমিক ফরাসি প্রেমিকার কাছে হিরোশিমা নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা জানতে চান। চলচ্চিত্রের কাহিনি নায়িকার বয়ানে এবার এগোতে থাকে ফ্লাশব্যাকে ১৯৪৫-এর হিরোশিমা নগরীতে। চারদিকে আর্তচিৎকার আর ধ্বংসের চিহ্ন। বহ্নিশিখার উত্তাপ থেকে বাঁচতে দগ্ধ মানুষের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আর্তনাদ, বীভৎস দেহ থেকে খসে পড়া মাংসপিণ্ড, তেজস্ক্রিয়তায় ধুকে ধুকে অনাহারী শিশুদের মৃত্যুযাত্রার লোমহর্ষক দৃশ্যায়নসব একে একে পর্দায় ফুটে উঠতে থাকে।

অবশ্য ফরাসি প্রেমিকার ব্যক্তিগত জীবনও এমনই এক যুদ্ধের বিস্মৃতিতে আবিষ্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেভার্স-এ থাকাকালীন তিনি এক জার্মান সৈনিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এখনো তার সেই প্রেমিকের ভালোবাসায় বিসর্জিত। জাপানি প্রেমিককে তিনি তার সেই স্মৃতির কথাও বলতে থাকেন। আর সেই স্মৃতির টুকরো ইমেজগুলোও আবার ফ্লাশব্যাকে পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে।

মেয়েটির পরিবার জার্মান সেই প্রেমিককে মেনে নেয় না। নির্মম অত্যাচার নেমে আসে তার ওপর; গারদের মতো একটি ঘরে তাকে বন্দি রাখা হয়, কেটে দেওয়া হয় মাথার চুল। সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি তিনি আজও মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি। বর্তমানের জাপানি প্রেমিকের ভালোবাসাও তার অতৃপ্তিকে মলিন করতে পারে না। ফরাসি নারীর এই হাহাকারের মধ্য দিয়ে রেনেঁ হিরোশিমার হাহাকারকে কোলাজ করে তুলে ধরেন হিরোশিমা মন আমুর-এ। জাপানি প্রেমিকের সঙ্গে অন্তরঙ্গতাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে রেনেঁ তার মূল বক্তব্য প্রকাশ করেন।

তবে গল্পের শেষ পরিণতি গিয়ে দাঁড়ায় বিচ্ছেদে। অসাধারণ এক এসটাব্লিশিং শটে কাসাব্লাঙ্কা নামে একটি কফিবার দেখানো হয়। সেই কফিবারে শেষবারের মতো মিলিত হয় নায়ক-নায়িকা এবং সেখানেই হয় তাদের বিচ্ছেদ। এ যেনো বিখ্যাত কাসাব্লাঙ্কা চলচ্চিত্রে প্রেমের সেই ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি, যার সুরকে রেনেঁ প্রতীকরূপে কফিবারে স্থাপন করলেন, আর ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখলেন বিধ্বস্ত হিরোশিমা নগরীকে। রেনেঁ দুজন নারী পুরুষকে একটি সম্পর্কের মধ্যে নিয়ে আসলেন। তারা মিলিত হলো আবার সরে গেলো এমনই এক শহরের বুকে যা পারমাণবিক বিধ্বস্ততার প্রতীক, যেখানে তারা খুলে দিলো তাদের হতাশার উৎস। নিঃসঙ্গতার ওপর তাদের সাময়িক জয় হলো। কিন্তু শেষে তাদের ফিরে যেতে হলো সাধারণ সেই জীবনের শূন্যতায়। ঠিক যেমন এতো কিছুর পরও হিরোশিমায় আবারো গড়ে উঠবে প্রাসাদ; নকল চুল আর চামড়া লাগিয়ে মানুষের বীভৎস শরীরকে বানানো হবে স্বাভাবিক। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতা ক্ষণিকের। কারণ হিরোশিমার শিশুরা ঠিকই মাতৃজঠর থেকে সেই তেজস্ক্রিয়তার হাহাকার নিয়ে বেরিয়ে আসবে।

এই চলচ্চিত্রে এক নতুন বর্ণনারীতি যোগ করেছিলেন রেনেঁ। স্মৃতি ও বিস্মৃতির খণ্ড খণ্ড বর্ণনার পাশাপাশি ইমেজ ও ন্যারেটিভ টেক্সট-এর সমন্বয়ে তিনি এক ভিন্ন ন্যারেটিভ ঢঙ তৈরি করেন, যেখানে গল্পের মধ্যে পরম্পরা খুব কমই। অ্যাকশন ও প্লটের বদলে তিনি অন্তর্দৃষ্টিমূলক শৈলীর প্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্রামাণ্যচিত্র ও ফিকশনের মধ্যবর্তী অবস্থান থেকে সত্যকে উদ্ঘাটনের প্রয়াস চালিয়েছেন রেনেঁ। খানিকটা সিনেমা ভেরিতে ফর্মের মতো করে তিনি হিরোশিমা মন আমুর-এর কাঠামো নির্মাণ করেন। রেনেঁ ৬০-এর দশকের শুরুতে যখন চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন, ততোদিনে অবশ্য ফ্রান্সে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে সিনেমা ভেরিতে ফর্মটি চালু হয়ে গেছে। সিনেমা ভেরিতের প্রধান প্রয়াস ছিলো তথ্য ও কাহিনিচিত্রের মাঝামাঝি একটি আঙ্গিক দাঁড় করানো। রেনেঁ হয়তো এখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাই নবতরঙ্গের নির্যাস আর সিনেমা ভেরিতের কৌশলে উপস্থাপন করেছিলেন হিরোশিমা মন আমুরকে।

রেনেঁ তার অধিকাংশ চলচ্চিত্রে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেন না। তিনি চাইতেন দর্শকরাই তাদের মতো করে চলচ্চিত্রের দর্শনকে গ্রহণ করুক। অবশ্য এটি শুধু রেনেঁই নয়, ফরাসি নবতরঙ্গের নির্মাতাদের প্রায় সবাই অস্তিত্ববাদী দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাই কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক বা নৈতিক মানদণ্ড গ্রহণ করেননি তারা, সবকিছুই ছেড়ে দিয়েছেন দর্শকদের ওপর। তাই হিরোশিমা মন আমুরকে যদি কেউ প্রেমের গল্প বলে, সেটিও যেমন যুক্তিযুক্ত, আবার কেউ যখন যুদ্ধের গল্প বলে, তখনো ভুল হয় না। তবে এ কথা ঠিক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে যতো চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে হিরোশিমা মন আমুরকে তা থেকে সহজেই আলাদা করে চেনা সম্ভব। কারণ সেসব চলচ্চিত্রের বেশিরভাগেই হয় যুদ্ধকে জায়েজ করতে প্রচারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, নতুবা যুদ্ধকে কতোটা শৈল্পিকভাবে প্রদর্শন করা যায়, কতোটা বীরত্বের সঙ্গে মিলিটারি হুকুম পালন করা যায়, তার অনবদ্য আবেগীয় বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে!

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত এমনই একটি চলচ্চিত্র দ্য থিন রেড লাইন (১৯৯৮)। এর কাহিনি ১৯৪২ সালের গুয়েডালক্যানেল যুদ্ধ। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সলোমন দ্বীপপুঞ্জে জাপানিদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সৈন্যদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং সৈন্যদের অসাধারণ আনুগত্য ও আত্মত্যাগকে মর্মস্পর্শীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আমেরিকান নির্মাতা ট্রেন্স মালিক। এমনকি মৃত্যুকে কতোটা হৃদয়-বিদারকভাবে (শৈল্পিকভাবে) উপস্থাপন করতে পারা যায়এই যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি এর অভিনেতা নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু রেনেঁ চলচ্চিত্রকে যুদ্ধের ময়দান বানাতে চাননি। নতুন করে বোমা, বন্দুক আর গোলার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মানসিক যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদনে নিমগ্ন হননি। তাই যুদ্ধকে পুনর্নির্মাণ না করে যুদ্ধস্মৃতির যাতনাকে চলচ্চিত্রিক রূপ দিয়েছেন।

সেরা যুদ্ধকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পাওয়া ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই (১৯৫৭), দ্য হিল (১৯৬৫), দ্য ডার্টি ডজন (১৯৬৭), প্যাট্টন (১৯৭০), বিহাইন্ড এনিমি লাইন (২০০১) এবং অ্যাক্ট অব ভ্যালরও (২০১২) একইভাবে দ্য থিন রেড লাইন-এর পথ অনুসরণ করেছে। অবশ্য এই কাঠামোর বাইরে এসে রোম : ওপেন সিটি (১৯৪৫), শু সাইন-এর (১৯৪৬) মতো কিছু অনবদ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ হয়েছে। তবে বিষয় ও উপস্থাপনা শৈলীর ভিন্নতায় অন্য সব যুদ্ধ-চলচ্চিত্র থেকে হিরোশিমা মন আমুর অনন্য হয়ে আছে।

রেনের দ্বিতীয় কাহিনিচিত্র লাস্ট ইয়ার অ্যাট মারিয়েনবাদ (১৯৬১)। এখানে তিনি যতোদূর সম্ভব বাস্তব আর কল্পনাকে মুখোমুখি দাঁড় করালেন। তিনি চলচ্চিত্রে কল্পিত অতীতকেই বাস্তব করে ফিরিয়ে আনলেন। কারণ সেলুলয়েডের পর্দায় সব কালই ঘটমান বর্তমান। লাস্ট ইয়ার অ্যাট মারিয়েনবাদ ১৯৬১ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জিতে। কান চলচ্চিত্র উৎসবেও এটি প্রদর্শন হয়।

যুদ্ধের ভয়াবহতা ও দুঃসহ স্মৃতি রেনেঁকে বিচলিত করেছে প্রতি মুহূর্তে। হয়তো এ কারণেই তার চলচ্চিত্রে বার বার ফিরে এসেছে যুদ্ধ। আলজেরিয়ার যুদ্ধে ফরাসি মিলিটারিদের পলিসিকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই আলজেরিয় যুদ্ধের ভয়াবহতা তার চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়; নির্মাণ করেন মুরিয়েল (১৯৬৩)। সেখানে তিনি চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থা প্রকাশে মুখের ভাষাকে ব্যবহার না করে দৃশ্যচিত্র ব্যবহার করেন। ফলে চলচ্চিত্রের ভাষা পায় অন্য ধরনের পূর্ণতা। যুদ্ধ ছাড়াও নির্দিষ্ট করে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র-নির্মাণে পরে আগ্রহী হন রেনেঁ। দ্য ওয়র ইজ ওভার (১৯৩৩), ফার ফ্রম ভিয়েতনাম (১৯৬৭) ও স্ট্যাভস্কি (১৯৭৪) এর অন্যতম উদাহরণ।

১৯৭৭ সালে প্রভিডেন্স নির্মাণের মধ্য দিয়ে রেনেঁ ইংরেজি ভাষায় চলচ্চিত্র-নির্মাণ শুরু করেন। ৮০ দশকের পর থেকে রেনেঁর চলচ্চিত্রের বিষয় বা থিমে একটি পরিবর্তন দেখা যায়। এ পর্যায়ে তিনি জনপ্রিয় সংস্কৃতির উপাদানকে তার চলচ্চিত্রের বিষয় হিসেবে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে গান ও থিয়েটারকে। লাইফ ইজ অ্যা বেড অব রোজেস (১৯৮৩), লাভ আনতো ডেথ (১৯৮৪), আই ওয়ান্ট টু গো হোম (১৯৮৯), স্মোকিং নো স্মোকিং (১৯৯৩), প্রাইভেট ফিয়ার্স ইন পাবলিক প্লেস (২০০০), ওয়াইল্ড গ্রাস (২০০৯) এবং তার শেষ দুটি চলচ্চিত্র ইউ এইন্ট সিন নাথিং ইয়েট (২০১২) ও লাইফ অব রিলে (২০১৪) ছিলো থিয়েটার নির্ভর। এসব চলচ্চিত্রে তিনি কৃত্রিম সেটও ব্যবহার করেছেন।

ফরাসি নবতরঙ্গ ধারার অন্যতম পথিকৃৎ রেনেঁর পরবর্তী সময়ের এসব চলচ্চিত্র নিয়ে অবশ্য সমালোচকদের মধ্যে নানা কথা ওঠে। রেনেঁর অবশ্য সোজাসাপ্টা জবাবচলচ্চিত্র নির্মাণের রীতি হওয়া উচিত কালনির্ভর, আমার আগের  চলচ্চিত্রগুলো যে সময়ে নির্মাণ করেছিলাম, সেসময়ে বাস্তববাদী ধারার ওতোটা প্রচলন ঘটেনি, কিন্তু যখন এই ধারাটিও একেবারে প্রচলিত ধারায় পরিণত হলো, তখন আমি রাজনীতি ও সামাজিক ইস্যু থেকে সরে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।

রেনেঁ সবসময় চাইতেন প্রচলিত ধারাকে ভেঙে নতুন কোনো কাঠামো তৈরি করতেতার অনন্যতা এখানেই। চিত্রনাট্যকারদের কাছে সবসময় ঋণী ছিলেন রেনেঁ, কারণ তিনি নিজে কখনো চিত্রনাট্য লেখেননি। নিজেকে কেবল দৃশ্য-নির্দেশক বলে অভিহিত করতেন তিনি। তবে ব্যতিক্রমকে খুঁজে নিতে পারাই যে একজন পরিচালকের স্বার্থকতা তা নিশ্চয়ই রেনেঁ জানতেন। আর সেই স্বকীয়তায় দীর্ঘ ছয়টি দশক চলচ্চিত্র জগতকে আলোকিত করেছেন; নির্মাণ করেছেন ৫০টির বেশি চলচ্চিত্র। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করে গেছেন তিনি। তাই বিশ্বের আপামর দর্শকও তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে ভোলেনি। অস্কার ছাড়া চলচ্চিত্রের বাকি প্রায় সব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। মহান এই নির্মাতা আমাদের ছেড়ে চলে যান এ বছরের (২০১৪) ১ মার্চ।

 

লেখক : মুর্শিদা টুম্পা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী।

tumpamcjru@gmail.com

তথ্যসূত্র

১. কারদুলো বার্ত, উদ্ধৃত; আউয়াল, সাজেদুল (২০১১ : ৮১); চলচ্চিত্র ধারাসমূহের অন্তর্গত পাঠ; চলচ্চিত্রকলার রূপ-রূপান্তর; দিব্য প্রকাশ, ঢাকা।

২. আউয়াল, সাজেদুল (২০১১ : ৮৩); চলচ্চিত্র ধারাসমূহের অন্তর্গত পাঠ; চলচ্চিত্রকলার রূপ-রূপান্তর; দিব্য প্রকাশ, ঢাকা।

৩.http://www.theguardian.com/film/2010/jun/22/alain-resnais-interview

 

পাঠ সহায়িকা

দাশগুপ্ত, ধীমান (২০০৬); চলচ্চিত্রের অভিধান; বাণীশিল্প, কলকাতা।

আউয়াল, সাজেদুল (২০১১); চলচ্চিত্রকলার রূপ-রূপান্তর; দিব্য প্রকাশ, ঢাকা।

চলে গেলেন অ্যালাঁ রেনেঁ; কালের কন্ঠ, ২০ মার্চ ২০১৪।

http ://en.wikipedia.org/wiki/Alain_Resnais

http://en.wikipedia.org/wiki/Andr%C3%A9_Breton

http://www.theguardian.com/film/2010/jun/22/alain-resnais-interview

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন